বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৪ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : পাইকারি, খুচরা ও সঞ্চালন- তিন ক্ষেত্রেই বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়িয়েছে সরকার; এর ফলে ভোক্তাদের প্রতি মাসে গুণতে হবে বাড়তি টাকা।
দুই বছরের বেশি সময় পর বিদ্যুতের এই দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই খাতে ব্যয় বৃদ্ধিকে কারণ দেখিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
তবে এই দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক বলে দাবি করেছে ভোক্তা সংগঠন ক্যাব। তারা বলছে, বিদ্যুৎ খাতে ‘অযৌক্তিক’ ব্যয় না কমিয়ে সরকার জনগণের ব্যয়ভার বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিরোধিতা এসেছে; বিএনপি এবং বাম দলগুলো এই দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ জানিয়েছে।
দাম বাড়াতে বিভিন্ন সংস্থার প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানির পর নিয়ম অনুযায়ী ৯০ দিন পূর্ণ হওয়ার এক সপ্তাহ আগে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে বিদ্যুৎ ব্যবহারের নতুন হার নির্ধারণের ঘোষণা দেয় বিইআরসি।
সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে (খুচরা) প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৬ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। প্রতি ইউনিটের দাম ৬ টাকা ৭৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭ টাকা ১৩ পয়সা।
পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট গড়ে ৪০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। ৪ টাকা ৭৭ পয়সা থেকে বেড়ে প্রতি ইউনিটের দাম হয়েছে ৫ টাকা ১৭ পয়সা।
এছাড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালন মূল্যহার বা হুইলিং চার্জ প্রতি ইউনিটে শূন্য দশমিক ২৭৮৭ টাকা থেকে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয়েছে শূন্য দশমিক ২৯৩৪ টাকা।
খুচরা পর্যায়ে ডিমান্ড চার্জও বিভিন্ন পর্যায়ে ৫ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বিইআরসি চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল জানান, আসছে মার্চ থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের নভেম্বরে পাইকারি বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৫ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়িয়েছিল সরকার, যা ওই বছর ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
এখন দাম বাড়ানোর পেছনে কী কারণ- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে বিইআরসি চেয়ারম্যান জলিল বলেন, “আমদানি করা কয়লার উপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ধার্য করা হয়েছে, প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের উপর ১০ পয়সা করে ডিমান্ড চার্জ আরোপ করা হয়েছে, অবচয় ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ বেড়েছে, এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সির অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোতে ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
“পল্লী বিদ্যুত সমিতিগুলোকে তুলনামূলক কমমূল্যে অধিক পরিমাণ বিদ্যুত দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ সাধারণ জনগণের কাছে কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।”
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই কারণগুলো দেখান তিনি।
বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হলে তার প্রভাবে বিদ্যুতের দাম কমবে বলেই সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছিল। এখন এলএনজি আমদানির পর প্রথমে গ্যাসের দাম পরে বিদ্যুতের দাম বাড়ল।
সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে বার বার সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে বিইআরসিকে।
উত্তরে কমিশনের সদস্য রহমান মুরশিদ বলেন, “বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পেছনে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ভূমিকাকে বিবেচনায় আনা হয়নি।”
নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির পর ২৩০/৪০০ ভোল্টের আবাসিক গ্রাহকদের মাসিক বিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আবাসিকে লাইফ লাইন গ্রাহকদের এনার্জি চার্জ বাবদ আগের লাইফলাইন গ্রাহকদের সর্বোচ্চ ১৭৫ টাকার পরিবর্তে এখন গুণতে হবে সর্বোচ্চ ১৮৭ টাকা।
প্রথম ধাপের (০ থেকে ৭৫ ইউনিট) গ্রাহকদের আগের ৩০০ টাকার পরিবর্তে এখন এনার্জি চার্জ বাবদ গুণতে হবে ৩১৪ টাকা, দ্বিতীয় ধাপের (৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট) গ্রাহকদের আগের ১০৯০ টাকার পরিবর্তে এখন গুণতে হবে ১১৪৪ টাকা, তৃতীয় ধাপের (২০১ থেকে ৩০০ ইউনিটের) গ্রাহকদের ১৭১০ টাকার পরিবর্তে গুণতে হবে ১৮০০ টাকা, চতুর্থ ধাপের (৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট) গ্রাহকদের ২৪০৮ টাকার পরিবর্তে গুণতে হবে ২৫৩৬ টাকা, পঞ্চম ধাপে (৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট) গ্রাহকদের ৫৫৮০ টাকার পরিবর্তে ৫৯৬৪ টাকা গুনতে হবে। ৬০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৬৪২০ টাকার পরিবর্তে ৬৮৭৬ টাকা গুণতে হবে।